ঝিনাইদহ জেলার নদ-নদীর সংখ্যা, আয়াতন ও উৎপত্তির সংক্ষিপ্ত বিবরণ ।
ঝিনাইদহ জেলার নদ-নদীর সংখ্যা, আয়াতন ও উৎপত্তির সংক্ষিপ্ত বিবরণ ।
নদ ও নদী-র মধ্যে সামান্য বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। কেউ কেউ নদীকে 'নদ' বলে আখ্যায়িত করেন। যে জলস্রোত পূর্ব দিকে প্রবাহিত তা 'নদ' এবং পশ্চিমাভিমুখী জল প্রবাহকে নদী বলে। নদী প্রবাহ সাধারনত আঁকা বাঁকা হয়ে চলে এবং বালুকনা, কাদা,বালি প্রভৃতি স্তুুপকৃত হয়ে চর, দ্বীপ,বদ্বীপ ও মোহনা সৃষ্টি করে। নদীকে আবার 'গাঙ্গ'-ও বলা হয়ে থাকে। 'গাঙ্গ ' অর্থ গঙ্গাজাত। ঝিনাইদহ জনপদে মোট ১৫টি নদ-নদীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
১. নবগঙ্গা নদী ৩৬০.৯৯ হেক্টর ২. কালীগঙ্গা নদী ২৫০.২০ হেক্টর
৩. ডাকুয়া নদী ৩৫.০০ হেক্টর
৪.গড়াই নদী ৩৫. ০০ হেক্টর
৫. কুমার নদ ৩৬০.৯৯ হেক্টর
৬. বেগবতী নদী ২৫৫.৬০ হেক্টর
৭. চিত্রা নদ ২৮৩.১৭ হেক্টর
৮. ফটকী নদ ১২.২৯ হেক্টর
৯. কপোতাক্ষ নদ ৫২.৩২ হেক্টর
১০. ভৈরব নদ ১২৮.৫০ হেক্টর
১১. ইছামতি নদী ২৫.৯৫ হেক্টর
১২. কোদলা নদ ১৯.৯২ হেক্টর
১৩. বেতনা নদী ১৫.০০ হেক্টর
১৪. সঞ্চয় নদ ১১.০০ হেক্টর
১৫. করতোয়া নদী ৯৮.৯৬ একর
ভূ-খন্ড হিসাবে ঝিনাইদহ জেলা ক্ষুদ্র হলেও এটি একটি নদীবহুল জনপদ। এই সকল নদ-নদীর পলিতে গড়া আমাদের ঝিনাইদহ। এসব নদীতে বর্তমানে নেই কোনো স্রোত, ফলে আগের মতো এখন আর নাব্য নেই। মৃতপ্রায় নদীগুলো কোনো প্রকারে তাদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। ক্রমে ক্রমে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্চে নদীর তলদেশ,আর সেই সাথে নদীর পাড়ে তৈরী হচ্ছে নিত্য নতুন বসতবাড়ি। নদীর তলদেশে ফলানো হচ্ছে ঋতুভিত্তিক ফসল। শুধু মাত্র বর্ষাকেলে নদীগুলো ফিরে পায় কিছুটা গতি ও প্রানচাঞ্চল্য।
১. নবগঙ্গা নদী : নবগঙ্গা ঝিনাইদহ জেলার দীর্ঘতম নদী। এটি মাথাভাঙ্গা নদীর একটি শাখা নদী। গঙ্গার ন্যায় প্রবাহের জন্য এর নাম দেওয়া হয়েছিল নবগঙ্গা। চুয়াডাঙ্গা শহরের মুচিপাড়ার নিকট হতে উৎপন্ন হয়ে পূর্ব দিকে এক বিলের মধ্যে পড়ে নবগঙ্গা তার মূল মাথাভাঙ্গা নদী হতে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে এবং সেখান থেকে কিছুটা মজে গিয়ে ঝিনাইদহ ভূ-খন্ডে প্রবেশ করেছে। পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে হরিনাকুন্ডু উপজেলার রিশখালীর পাশ দিয়ে ঝিনাইদহ শহরের উত্তর অংস ছুঁয়ে উত্তর দিকে ৪ কিমি. যেয়ে পুনরায় পূর্বদিকে অগ্রসর হয়েছে। পোড়াহাটি, মধুপুর, দুর্গাপুর, হরিশংকপুর,হাটগোপালপুর,
ইছাখাদা হয়ে মাগুরা শহরের উত্তরে মুচীখালি খালের দ্বারা কুমার নদীর সাথে মিশে একাত্ম হয়ে গেছে। এ জেলায় নবগঙ্গা নদীর আয়তন ৩৬০.৯৯ হেক্টর।
২. কালীগঙ্গা নদী : কালীগঙ্গা নদী কালীগঙ্গা নামেই সমাধিক পরিচিত। কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ছেউড়িয়ার (কুমারখালী উপজলা) নিকট শ্নশানঘাটের নিকটবর্তী গাড়াই নদী থেকে কালীগঙ্গা নদীর উৎপত্তি। এ নদী রাহিনী গ্রামের রেললাইনের নিচ দিয়ে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শৈলকুপা উপজেলার ত্রিবেণী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গাড়াগঞ্জের নিকট কুমার নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। পূর্বে এ কালীগঙ্গা নদী খুব খরস্রোতা ছিল। এবং লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা যাতায়াত করত। গড়াই রেল ব্রিজ নির্মানের জন্য কুষ্টিয়া থেকে রেললাইন গড়াই ব্রিজ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয় ১৮৬৫ সালে। তখন কালীগঙ্গার উপর বাঁধ দিয়ে নদীটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। পরবর্তিকালে বিংশ শতাব্দীর ষাট দশকে কুমার নদের মুখে পুনরায় বাঁধ দেওয়া হয়। কালীগঙ্গা এখন নাব্যতা হারিয়ে ব্যবহারের সম্পুর্ন অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঝিনাইদহ জেলায় কালীগঙ্গার আয়াতন ২৫০.২০ হেক্টর।